পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

আশাবাদী

                     আশাবাদী 
                 সুবোধকুমারশীট
               
 আমরা ছিলাম না কোনো যোদ্ধা,ছিলাম না কোনো বীর,ছিলনা তেমন বুদ্ধি,ছিলাম আমরা মানুষ,ছিল হয়তো আমাদের মনোবল।আমাদের হয়তো ছিল এক ছোট্ট  গাঁ/ গ্রাম।ছিলাম যদি বেশ সুখে সবাই।ছিল না যদিও কোন হিংসা,ছিল না যদি কোন ক্ষোভ, ছিল না যদি কোন লোভ।যদি সবাই থাকতাম মিলেমিশে বেশ আনন্দে।অন্যের দুঃখ-কষ্ট ভাগ হয়তো করে নিতাম একে অপরে।আর সুখ এলে উল্লাসে হয়তো সীমা থাকতো না আমাদের।আমাদের গ্রামে চাষিভাই ,যদি করতো চাষবাস।সবাই হতাম যদি চাষিভাই।আমাদের যদি পেশা হত চাষ করার।সকাল হলে আমরা চলে যাই যদি খেতের দিকে, দুপুর হলে যদি বাড়ি আসি।আর দুই মুঠো যদি ভাত খাই সব্বাই এক সঙ্গে বসে।আর বিশ্রাম করে, বিকেল হলে আমরা যদি মাঠে চলে যাই।আর সন্ধ্যার আগে যদি বাড়ি আসি আমরা, তখন সবার বাড়িতে যদি শঙ্খ বাজে আর সন্ধ্যা নামে।হঠাৎ! গালে সজোরে 'হাতের আঘাতে' আমার ঘুম ভেঙে যায়।এবং দেখি রাস্তার পাশে এক বৃহৎ বট গাছের নীচে বসে আছি।তখন আপছা চাঁদ মাথার উপর,যে দিকে তাকাই অন্ধকারে মাঠ আর মাঠ,কোনও নরের চিহ্ন নেই।আমি যাচ্ছি গ্রামের মানুষের অহিংসার পাপ লাঘব করতে কোন এক দুর দেশে, কোন এক মানুষের খোঁজে। হয়তো তিনি এদেরকে সত্যের পথে নিয়ে আসতে পারেন।সেই রাতে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম, বাম পাশে থাকা হ্যারিকিন তুলে দম দিয়ে একটু আলো বাড়ালাম, আর ডান বগলে ছাতা নিয়ে ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলাম।রাস্তার দুই পাশে ছিল গাছ আর গাছ,আর তার মাঝে আমি একা চলমান।মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ি এবং পিছনে তাকাই,আবার চলতে থাকি।মনে হয় পেছনে কে যেন 'ধাবা' করছে।গা টা ছমছম করে উঠে।আবার দাঁড়াই পেছনে তাকাই কেউ নাই। আবার চলতে থাকি।তখন শুধু শোনা যাচ্ছে 'কালো পেচকের' ভয় জাগানো ডাক আর 'ঝিঁঝির তীক্ষ্ন শব্দ' ।তখন হালকা শীত পড়েছে।হালকা শীতের সময়ও গা থেকে ঘাম তরতর করে ঝড়তে থাকে।হঠাৎ সব শব্দ যায় থেমে,আমি দ্রুত হাঁটতে থাকি।হঠাৎ সামনে এক শুকনো নালা,তার মধ্যে পা আটকে পড়ে এবং হ্যারিকিনের কাঁচ গেল ভেঙে।তখন হালকা চাঁদ মামার আলো আমাকে পথ দেখায় লক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।এই ভাবতে ভাবতে চললাম যে গ্রাঁয়ের মানুষ এমন সার্থপর কেন?তারা,কেউ একজন বিপদে পড়লে, সেই খানে যেতে অন্য কাউকে বাধা দেয় না কেন?কেন ভালো কথা বললে তারা অশান্তি প্রকাশ করে?কেন চা-এর দোকানে রাজনৈতিক খবরের কাগজ নিয়ে তর্ক সহিত যুদ্ধ করে।কেন বাঙালি হয়ে বাঙালির আনন্দে রেশিয়ে মরে? কেন মানুষ হয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলে? এই সব আর সহিতে পারিনা....


                       শরীরটা বড়ো কান্ত হয়ে পড়ছে,তাই একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য অন্ধকারে একটি গাছের নীচে বসে পড়ি।আর গাঁয়ের মানুষের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে যায় বুঝতে পারলাম না।যখন প্রায় বেলা 2টা সূর্যের পখর রোদ্দুর তির্যক ভাবে মুখে পড়ে তখন ভেঙে যায় ঘুম।ঘুম থেকে উঠে চারিদিকে তাকাই কেউ নেই।না আছে কোন পাখি,না আছে কোনো মানুষ, না আছে কোনো পুকুর।রাস্তার উপর থেকে দূর দিকে তাকাই,মাটির উপরে উত্তপ্ত বায়ু যেন ঝলমল করছে।আকাশ মাঠের মাঝখানে যেন বিলীন হয়ে গেছে।আমি ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত এবং রৌদ্রুর মাথায় করে হেঁটে চলেছি কোনো এক মানুষের খোঁজে। যত যেতে থাকি তত বাড়তে থাকে চলার পথ,অবশেষে একটা জঙ্গল পড়ে চলার পথে।সেই জঙ্গলে দেখলাম  খুব সাধারণ  কিছু গাছগুলোর দৃশ্য,যারা আমাকে সমস্যার সমাধান কীভাবে কম করা যায় দেখিয়েছে ও যানিয়েছে তার অবস্থিতির মাধ্যমে।আমি যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম,তখন উপলব্ধি করি সেই গাছের বাহ্যিক অবস্থান।কি জানি ঘুম ভেঙে গেল,বশে ভাবলাম স্বপ্নটিকে,  তারপর গাছটির বর্ননা(বাহ্যিক)হল-
    "একটি গাছে রয়েছে অনেক পত্র,
    দুর্ভাগ্য যে,সবাই ছিল না পবিত্র।
    তাদের মধ্যে ছিল,প্রায় রোগে সবাই আক্রান্ত,
    তবুও গাছটির হয়নি রোগ সৃষ্টি কীটের দ্বারা বিরক্ত।
    কারন আমি দেখেছি তার রয়েছে স্বাস্থ্য,
    তবুও কিন্তু সে নয় অনন্ত।
    কিন্তু তার নীচে বেরিয়েছে যে কাক্ষিকমুকুল,
    গাছের এই সব বর্ণনা দেখে দূর হল সমস্ত ব্যকুল।

                      গাছের বাহ্যিক বর্ননা দেখে পরিস্কার হয়ে যায় মনের মধ্যে থাকা সমস্ত  ব্যকুল।এবং বুঝতে পারলাম গালে লাগা হাতের সজোরের আঘাত এবং পিছনে ধাবা আসলে কী? 'হাতের আঘাত' হল আমাদের মধ্যে থাকা 'মানবিকতা' যা বারে বারে আমাদেরকে যে কোনো পদ্ধতিতে সভ্য হতে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে,কিন্তু আমরা কয়জন তা পারি! আর 'ধাবা' করা হচ্ছে আমাদের মনে থাকা  'পাপ'(অন্ধবিশ্বাস,কুসংস্কার...) যা কোনোদিন পিছু ছাড়েনা। আর কালো পেচকের ভয় জাগানো ডাক হলো অসৎ মহাজন তথা ধনীদের (সিন্ডিকেট বশবর্তী রাজনৈতিক) জুলুম, অত্যচার ও শোষণের শব্দ।আর ঝিঁঝির তীক্ষ্ন শব্দ হল গরিব মানুষ তথা দরিদ্র কৃষক যারা অদৃষ্ট তথা ভগবানের কাছে জুলুম,অত্যাচার শোষণের বিরুদ্ধে কাতর প্রার্থনা।এই জগতে যেমন রাত্রে দিনকে আশা করা যায় না।তেমনি বর্তমান মানবসভ্যতার কাছে 'মানবিকতা' আশা করা যায় না।।




রচনাকাল-
নিজ বাসভবন,
01/02/2015,রবিবার,
02:17PM,

মাতৃভাষা

                       মাতৃভাষা
                  সুবোধকুমারশীট

আমরা হয়তো খুবই গর্বিত আমরা বাঙালি, আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি।যেমন আমরা মোহময় বাংলা ভাষায় বার্তালাভ করি।তেমনি আমাদের মনও হয়তো খাঁটি বাংলার মোহে গঠিত,তা আবার কয়জনের।যদি আমাদের মন সত্যিই বাঙালি হতো ,তাহলে অত্যাচারিত,লাঞ্ছিত বাঙালি তথা কোন মানুষকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিতাম না।বাঙালি তথা কোনো মান আর হুঁশ যুক্ত মানুষ এই অমানবিক ,বোধহীন আচরন করত না।এই বাংলা ভাষা বলে কি লাভ?যে ভাষা মানুষের জন্য নয় ।যে ভাষা মানুষের অত্যাচার লাঘব করার জন্য সত্তা সদা তেজহীন ।যে ভাষা লাঞ্ছিত, অপমানিত নারীর সম্মানের জন্য প্রতিবাদ করতে পারে না ।সেই ভাষার মুল্যবোধ কি সার্থক পথে যায়? আমরা এই রকম প্রতিবাদহীন, তেজহীন ভাষা চাই না।যে ভাষা মানুষের জন্য, নারী সমান মায়ের জন্য একটুকু প্রতিবাদে জন্য অক্ষম।যে ভাষা মাতৃভূমির প্রজন্মকে প্রতিবাদী করে তোলে না।সেই রকম বাংলা ভাষা বলে মাতৃভাষার গৌরব কলঙ্কিত করা।আজ অন্যজন লাঞ্ছিত, অত্যাচারীত কাল হয়তো তোমার পরিবার হবে লাঞ্ছিত, অত্যাচারীত।এই ভাবে আর কতদিন।এসো আমরা মনের মধ্যে থাকা প্রতিবাদী বাঙালিকে জাগ্রত করে তুলি।
এসো আমরা আমাদের সতেজ,মহাশক্তিযুক্ত প্রতিবাদী বাংলা ভাষাকে উদ্বুদ্ধ করি।এই বাংলা ভাষাকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে ঝাঁপিয়ে পড়ি এক সঙ্গে, আর মোহময় বাংলাকে সোনার বাংলা ভাষায় ,সোনার বাংলা গড়ে তুলি।এসো আমরা মাতৃভাষাকে নব রূপে সাজিয়ে তুলি প্রতিটি মানুষের অন্তরে,মনে, হৃদয়ে ।এই মায়ের দেওয়া মাতৃভাষাকে হৃদয়ে নিয়ে সমাজের সমস্ত কলঙ্ক মুছেফেলি।সমাজকে আবার নতুন রূপে গড়ে তুলি।এই সমাজ জন্ম দেবে,সেই প্রতিবাদী বাঙালিকে, সেই প্রতিবাদী নবজাতককে, যাদের কণ্ঠে প্রতিটি দেশ ঝড় তুলবে প্রতিবাদের, তখনই হয়তো 'মা' গর্বিত হবে।তখনই মাতৃভাষা বলা সার্থক হবে।।

                           ------- সুবোধকুমারশীট